শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন
নদী বেষ্টিত পুরো বরিশাল বিভাগে চলছে শত শত অবৈধ নৌযান। জনবল সংকট এবং যথেষ্ট তদারকির অভাবে অবৈধ কার্গো ও বাল্কহেড দেদারছে যাতায়াত করছে বরিশালের নদী পথ থেকে।
বিআইডব্লিউটিএ’র দায়সারা ভাবের কারণে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না এসব নৌ যানের বিরুদ্ধে। তবে নৌ পরিবহণ অধিদপ্তর বরিশালের কর্মকর্তাদের দাবী, তারা অভিযান অব্যাহত রাখছে। করা হচ্ছে জরিমানা ও মামলা।
জানা গেছে, সন্ধ্যা, সুগন্ধা, আঁড়িয়াল খা, কালাবদর, পায়রা, ইলিশা, বিষখালি, বুড়াগৌড়াঙ্গ, কীর্তনখোলা, মেঘনা, লোহালিয়া, আন্ধারমানিক, তেঁতুলিয়া ও আগুনমুখাসহ বেশ কয়েকটি নদ-নদী রয়েছে পুরো বরিশাল বিভাগে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই অঞ্চলে এবং এই অঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পন্য পরিবহণ করে থাকে কার্গো ও বাল্কহেডগুলো। তবে দিনে এবং বিশেষ করে রাতে প্রতিদিন কয়েক’শ অবৈধ (সার্ভে সনদ বিহীন) কার্গো ও বাল্কহেড চলাচল করে থাকে এই নদ নদীতে।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, পুরো বরিশালে কম করে হলেও ৬শ’ অবৈধ কার্গো ও বাল্কহেড পন্য পরিবহনের কাজ করে থাকে। নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হলেও জনবল সংকট ও নিরাপত্তাহীণতার কারণে অভিযানে ধীরগতির সৃষ্টি হয়। তাছাড়া বিভাগের অন্য জেলায় অভিযান পরিচালনা করতে হলে বরিশাল থেকে কর্মকর্তাদের গিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। এছাড়া বিশাল এই নদী মাতৃক এলাকায় ইন্সপেক্টরই রয়েছে মাত্র দুইজন।
এদিকে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিযান পরিচালনা করা হয় তবে সেটা তেমন কার্যকরি হয়না। অনেক সময় নিরাপত্তার অভাবে অভিযান ফলপ্রসূ হয়না। এর মধ্যেও অভিযান পরিচালনা করা হয়, তবে বেশীর ভাগ অবৈধ কার্গো বা বাল্কহেডই চোখের আড়াল থেকে বের হয়ে যায়। রাতে এসব নৌ যান চলাচল করলে আমাদের পক্ষে সেটা আটক করা সম্ভব হয়না। এর মধ্যেও গত এক বছরেও ৮টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয় পুরো বরিশাল বিভাগে। এতে ১৮০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যাতে ২২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তাছাড়া ১শ টি কার্গো এবং বাল্কহেড আটক করা হয় এই অভিযানে, যাদের কোনো সার্ভে সনদই ছিলো না।
এদিকে এই দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ নৌ যানের বিরুদ্ধে অভিযানে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয় বেশী। এসব নৌযান আটক করা হলে তারা তাদের মালিককে ফোনে ধরিয়ে দেয় এবং ফোনের অপর প্রান্তে থাকা মালিক নেতা পরিচয় দিয়ে অকত্থ ভাষায় গালাগাল এবং বদলি করে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে। যেটা আমরা মন্ত্রণালয়েও অবহিত করেছি। অবৈধ নৌ যানের বেশীরভাগই আসে নারায়ণগঞ্জ থেকে। আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। তবে আমাদের জনবল ও নিরাপত্তা আরো জোড়দার করা হলে অবৈধ নৌ যান বন্ধে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবো। তাছাড়া আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সরষের মধ্যেই ভূত রয়েছে। আমাদের এই দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। কেননা কয়েকজনের কারণেও আমাদের অভিযানে সমস্যা হয়ে থাকে।
এসকল বিষয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর বরিশালের ইঞ্জিনিয়ার ও শীপ সার্ভেয়ার আবু হেলাল সিদ্দিকী বলেন, অবৈধ নৌ যানের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল জেলা ও কলাপাড়া উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আমাকেই পুরো বিভাগে যেতে হয় অভিযান পরিচালনা করতে। আমরা তৎপর এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছি অবৈধ বাল্কহেড ও কার্গোর বিরুদ্ধে।
সূত্র: যুগান্তর