বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ১১:০৯ অপরাহ্ন
এস এল টি তুহিন: ট্রলার বোঝাই হয়ে আসছে রসালো ফল তরমুজ। বোঝাই হচ্ছে ট্রাক। চলে যাচ্ছে দূর দূরান্তের পথে। বাম্পার ফলন হওয়ার দাবীতে সংবাদ প্রচার হলেও উৎপাদন খরচ ও দাম নিয়ে হতাশ কৃষক। এদিকে শহরে পৌঁছেই আকাশ ছোয়া দর তরমুজ প্রতি। খাবার জন্য তরমুজ কিনতে না পেরে ক্ষুব্দ সাধারণ ক্রেতারা।
অন্যদিকে, ক্ষোভ খুচরা বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের মাঝেও। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তরমুজের আবাদ করলেও প্রতিবছরের মতো এবারও কৃষকরা হতাশ। তারা কম দামে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে তরমুজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ঠকছেন কৃষক ও ক্রেতারা। মাঝখান দিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা পকেট তাজা করছেন।
এদিকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা চেয়ারম্যান ডাঃ জহির উদ্দিন আহমেদ জানালেন, বাম্পার ফলনতো দূরের কথা। আমার এলাকার তরমুজ চাষীদের জীবনই এবছর ঝুঁকির মুখে। অজ্ঞাত ভাইরাসে হাজারো একর জমির তরমুজ নষ্ট হয়েছে। আপনারা স্বচক্ষে এসে অবস্থা দেখে যান প্লিজ। তারপর বলুন বাম্পার ফলন কিনা।
শনিবার সকালে বরিশালের পোর্ট রোড ঘাটে তরমুজ বোঝাই ট্রলার থেকে একশত তরমুজের দর পড়ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ২/৩ কেজি ওজনের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১০০/১৫০ টাকায়। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে এখানে নদী নির্ভর সব পণ্যের বাজার বলে দাবী ক্ষেত থেকে তরমুজ ক্রয়কারী মধ্যস্বত্ব ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারদের।
সরেজমিনে ২ এপ্রিল শনিবার নগরীর পোর্ট রোড এলাকার আড়ৎ ঘুরে দেখা গেল, অপেক্ষমাণ তরমুজ বোঝাই ট্রলারের ভিড়। কয়েকজন ট্রলার চালকের সাথে কথা বলে জানা গেল, তাদের কেউ এসেছেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী কিম্বা ভোলার চরমোতি কিম্বা আরো দূর্গম চর এলাকা থেকে। ট্রলার চালকের দাবী তার ট্রলারে একসঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার তরমুজ ধারণ ক্ষমতা আছে। সাধারনত ভোলাঘাট থেকে তাদের ভাড়া করা হয়। ট্রলার বোঝাই করে আসার জন্য সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা ভাড়া নেন তারা।
মুঠোফোনে ভোলার একজন চাষী মোতাহার মুন্সি জানালেন, ভোলার কিছু এলাকায় তরমুজের ফলন সত্যি ভালো হয়েছে এবছর। তিনি শ’ প্রতি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তার ফসল। অর্থাৎ প্রতিটি তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা দরে। মোতাহার আরো জানান, বেশিরভাগ মাঝারী সাইজের তরমুজ বিক্রি করেছেন তিনি। যার ওজন হবে তিন/পাঁচ কেজি আনুমানিক।
এদিকে বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানাধীন বাহেরচর ও গোমা এলাকার তরমুজ চাষীরা এবছর হতাশা প্রকাশ করে জানান, তাদের উৎপাদন খরচ অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না। বাহেরচর এলাকায় ট্রলার নিয়ে ঘুরে ঘুরে চাষীদের ক্ষেত প্রতি যে দর ধরা হয় তাতে ৫/৭ কেজি ওজনের তরমুজ সর্বোচ্চ ৫০/৬০ টাকা দাম বলছে ফরিয়ারা।
এখানের গোমার কৃষক কবির মের্ধা বলেন, তিনি নিজে তিন কানি জমিতে (তিনশো শতক) তরমুজ চাষ করেছেন। তার ক্ষেতে সর্বনি ৫ কেজি থেকে ১২ কেজি ওজনের তরমুজ ফলে। উৎপাদন খরচই ১০০ টাকার উপরে। তাই তিনি এবছর নিজেই তরমুজ আড়তে নিয়ে যাবেন। কোনো মধ্যস্বত্বভোগীকে দেবেন না।
মধ্যস্বত্বভোগী বা ফরিয়ারা নৌকা বা ট্রলার নিয়ে চর এলাকায় ঘুরে বেড়ায় ও কৃষকদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে কম মূল্যে পণ্য কিনে আনে। কৃষকদের অভিযোগ, বরিশালের বেশিরভাগ আড়ৎদারই মধ্যস্বত্বভোগী বা ফরিয়া। তারাই লোক পাঠিয়ে বাজারের দর ওলট-পালট করে দেন
অথচ বরিশালের কীর্তনখোলার তীরে পোর্ট রোডের ঘাটে এসেই ১০/১৫/১৮ হাজার টাকায় দর উঠে গেছে। কারণ, তাদের দাবী, ট্রলার ভাড়াসহ পথের খরচ গেছে আরো প্রায় ৭/৮ হাজার টাকা। এমনটাই জানালেন পোর্ট রোডের আড়ৎদার মোবারক।
মোবারক আরো জানান, এখানে অপেক্ষারত এই মানুষগুলো সবাই উত্তরবঙ্গের বেপারী বা ব্যবসায়ী। তারা সরাসরি ট্রলার থেকে কিনে নিয়ে ট্রাকে তুলছেন সব পণ্য।
উত্তরবঙ্গের রংপুর থেকে আগত ব্যবসায়ী ইমান আলী বললেন, বরিশাল অঞ্চলে এবছর তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে শুনে ছুটে এসেছিলাম। কিন্তু এখন যে দামে কিনতে হচ্ছে তা প্রতিটি তরমুজ ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও খরচ উঠবে না। এ জন্য তিনিও ট্রলার ও ট্রাক ভাড়া বৃদ্ধিকে দায়ী করলেন।