রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০২:০১ অপরাহ্ন
বরিশালের হিজলায় এক যুবককে অমানবিক নির্যাতন করে মুখে ময়লা পানি ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
সম্প্রতি হিজলার হরিনাথপুর তালতলা জামে মসজিদ রোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা জুড়ে তোলপাড়ের পরে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ওই যুবকের নাম আজম ব্যাপারী। তিনি হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের হরিনাথপুর বাজারসংলগ্ন টমুচরের বাসিন্দা ও পেশায় তেল ব্যবসায়ী।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, নির্যাতিত যুবকের হাত-পা বেঁধে রাস্তার ওপর শুইয়ে রাখা হয়েছে। তার চারদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন বেশ কয়েকজন লোক। এর মধ্যে একজন ওই যুবকের বুকের ওপর পা দিয়ে দাঁড়ানো, একজন আজমের পা ও আরেকজন তার মাথা মাটির সঙ্গে চেপে ধরে আছেন।
একটু পরেই বুকের ওপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি বদনা (টয়লেটে ব্যবহৃত পানির পাত্র) দিয়ে ময়লা পানি জোর করে যুবকের মুখে ঢালার চেষ্টা করেন। তখন যুবক অনেক অনুনয়-বিনয় ও ধস্তাধস্তি করেও তাদের থেকে রক্ষা পাননি। এসময় পাশে দাঁড়িয়ে কিছু লোক এ ঘটনা উপভোগ করলেও কেউ প্রতিরোধে এগিয়ে আসেননি। আর পুরো ঘটনাটি পাশ থেকে একজন ভিডিও করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, ঝাড়-ফুঁকের কাজ করে অপবাদ দিয়ে ওই যুবককে এমন মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে স্থানীয় প্রভাবশালী মাহবুব সিকদার ও তার লোকজন। তবে, ঘটনার পর থেকেই ওই যুবককে আর কেউ এলাকায় দেখেননি। তার পরিবারের কেউও এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছেন না। জানা গেছে, যুবক লোকলজ্জায় মোবাইল ফোন বন্ধ করে তাবলীগ জামায়াতে চলে গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় মাহবুব সিকদারের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন আজম ব্যাপারীর ওপর এই নির্যাতন চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও ঘটনাটি কবে ঘটেছে তা কেউ জানাতে পারেননি। তবে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর এই ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো দাবি করেছে। আর ব্যবসা ও জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে সন্দেহ পুলিশের।
এ বিষয়ে হরিনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, শুনেছি ওই যুবককে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এক স্বজনের অসুস্থতার কারণে আমি ঢাকায় থাকায় এর বিস্তারিত জানি না।
এ বিষয়ে স্থানীয় শেওড়া সৈয়দখালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক তারেক আহসান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি শোনার পর থেকেই আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। এ বিষয়ে কেউ এখনো অভিযোগ দেয়নি। তবে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিকেলের দিকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত তথ্য জানাতে পারবো।
হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমীনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনা শুনেছি। ভুক্তভোগী কিংবা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউই এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলেনি। তবে, আমরা এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছি।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগী ওই যুবক এখন তাবলীগ জামায়াতে রয়েছে। তাকে না পাওয়া গেলেও পুলিশ মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর, ভিডিওটি দেখে দোষীদের শনাক্ত করে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বরিশালের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জেনে সকালেই সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছি। নির্যাতিত যুবকের নাম আজম ব্যাপারী বলে জানা গেছে। তিনি হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের বাসিন্দা মহিউদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে।