বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২১ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
বরিশাল মহানগর যুবদলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় সরকারি এম বি কলেজ মাঠ উন্মুক্ত করার দাবীতে মানববন্ধন কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে সংরক্ষিত বনের বালু উত্তোলন, হুমকিতে সবুজ বেষ্টনী বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, উপকূলে গুমট পরিবেশ চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের রাস্তা সহ বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন এলজিইডির টিম বাউফল নারীর বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত বাউফলে ৮দিনের অভিযানে ১৯ জেলে আটক, প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ মিটার জাল জব্দ বাংলাদেশ মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক পরিষদ বরিশাল মহানগরীর প্রতিনিধি সমাবেশ কলাপাড়ায় নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটায় এক লাখ টাকা জরিমানা কুয়াকাটা পৌর বিএনপির অফিস ভাংচুর মামালায়, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি সহ ৪ জন জেল হাজতে ডাকাত বাহিনীর প্রধান ২০মামলার আসামী জুয়েল মৃধা গ্রেপ্তার  কলাপাড়ায় এইচএসসিতে মহিপুর  মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজ এগিয়ে ৫ দিন পাঞ্জা লড়ে মৃ-ত্যুর কাছে হার মানলেন সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম উপকূলের শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিযোগিতা মহিপুরে অর্থের অভাবে অন্ধ হতে বসেছে শিশু তাওহিদ, সাহায্যের আবেদন
স্কুলছাত্র নয়ন হত্যা: পিবিআইয়ের তদন্তে রহস্য উন্মোচন

স্কুলছাত্র নয়ন হত্যা: পিবিআইয়ের তদন্তে রহস্য উন্মোচন

Sharing is caring!

বরিশালের উজিরপুরের স্কুলছাত্র নয়ন হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন হতে চলেছে। মামলার তদন্ত নানা নাটকীয় মোড় নেওয়ার পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে রহস্য।

এরমধ্যে পিবিআইয়ের হাতে আমিনুল ইসলাম আমিন নামে এক যুবক আটক হওয়ার পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।

তবে পিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়া আসামির নাম বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের তদন্তে আসেনি বলে জানিয়ে নিহতের বাবা সোবাহান দাবি করেছেন, শুরু থেকেই থানা পুলিশ তদন্তে গড়িমসি করছিল। তবে পুলিশের তদন্তে যে ৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয় তারমধ্যে একজন খুনি ছিল। বাকিদের কেউ-ই চেনে না।

পিবিআইয়ের তদন্তের দৃশ্যমান গতিতে সন্তুষ্ট সন্তানহারা এ বাবা।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার ভরসাকাঠি গ্রামের বাসিন্দা ওসমান হাওলাদারের পুত্র আশিক হাওলাদার (২২), আমিনুল ইসলাম আমিন (১৭) ও ভরসাকাঠির বিপরীতে একটি খালের ওপার বাবুগঞ্জ থানার রমজানকাঠি গ্রামের বাসিন্দা ইদ্রিস মিয়ার ছেলে মোমিন (১৭) একসঙ্গে চলাফেরা করতো। এরা নিয়মিত মাদক (ড্যান্ডি) সেবন করতো।

এরমধ্যে আশিক হাওলাদারকে মাদক সেবনের সময় দেখে ফেলে তার চাচাতো ভাই সোবাহান হাওলাদারের ছেলে বামরাইল এবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নয়ন হাওলাদার। যা পরে আশিকের পিতার কাছে ফাঁস করে দেয় নয়ন। এতে আশিক ক্ষিপ্ত হয়ে তিন বন্ধু মিলে নয়নকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে এবং চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়ি থেকে নয়নকে ডেকে নিয়ে যায় আশিক।

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আমিন উল্লেখ করেছেন, আশিক ডেকে নেওয়ার পর ভরসাকাঠি গ্রামের গির্জাঘর নামক একটি বাড়িতে নয়নের হাত, পা ও মুখ বেধে ফেলে রাখা হয়। সেখানে নয়নকে মারধর করে তার মোবাইল ফোন নিয়ে চট্টগ্রামে থাকা মা-বাবার কাছে কল করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অন্যথায় নয়নকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।

এদিকে পরে ওইদিন রাত ৯টায় গির্জাঘরের পাশের নদী পার হয়ে রমজানকাঠির একটি পাটক্ষেতের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় অপহৃত নয়নকে। পাটক্ষেতটি ছিল আসামি মোমিনের বাড়ির পেছনে।

জবানবন্দিতে আমিন জানায়, পাটক্ষেতে নেওয়ার পরপরই ইট দিয়ে নয়নের মাথায় আঘাত করে আশিক। তখন আমিন ও মোমিন আহত নয়নের হাত পা চেপে ধরে। আর আশিকের সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে মাটিতে পরে যাওয়া নয়নের গলায়, ঘাড়ে উপুর্যপরি কোঁপাতে থাকে। এতে নয়ন মারা গেলে একটি বস্তায় ভরে, বস্তার সঙ্গে ইট বেধে খালে ফেলে দেওয়া হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান জানান, নয়নকে হত্যার পর অপরাধীরা বাড়িতে ফিরে আসে। নয়ন, আশিক ও আমিনের বাড়ি পাশাপাশি। অপরাধীরা খুনের পর ওই রাতে ঘরে এসে ঘুমায়।

তদন্ত সূত্রের বরাত দিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, সকালে মরদেহ উদ্ধারের খবরের পরও স্বাভাবিক ছিল অভিযুক্ত খুনিরা। আশিকের পায়ে রক্তের দাগ লেগে থাকায় তাকে আটক করে পুলিশে দেয় প্রতিবেশীরা। তখন আশিক স্বীকার করে হত্যাকাণ্ডের কথা।

মাহফুজুর রহমান জানান, থানায় আশিক তার সঙ্গে তিনজনের নাম বলে। যদিও যাদের নাম বলেছে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সূত্র স্পষ্ট নয়। তবে আমরা আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দেখছি বিষয়টি।

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, আশিক যে তিনজনের নাম বলেছে তারাও ড্যান্ডিসেবী। পূর্ব বিরোধের জের ধরে আশিক ওই তিনজনের নাম বলে থাকতে পারে।

এদিকে নিহত নয়নের বাবা সোবাহান বলেন, শুরু থেকেই পুলিশকে বলেছিলাম আশিক যাদের কথা বলছে তারা খুনি নয়। এ কথা বলার পর মোমিনের পিতা ইদ্রিস আমাকে টাকার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় পিটিয়ে আমার পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়।

ওদিকে পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান জানান, হত্যায় আরও কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে। বেশ কয়েকটি সূত্র এখনো মেলেনি। আমরা সেই সূত্র ধরে কাজ করছি। আশা করি অল্প সময়েই বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা যাবে।

তিনি আরও জানান, প্রথমে আমিন ও মোমিনের নাম সামনে না আসায় তারা নিরাপদে এলাকা ত্যাগ করে। এরমধ্যে আমিনের মা ফতুল্লায় ছেলেকে নিয়ে গা ঢাকা দেয়। যা পিবিআই তদন্তে নেমেই জানতে পেরে আমিনের চাচাকে নজরদারিতে রাখে। তার সূত্র ধরে আমিনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালালেও, তার আগেই বিষয়টি তারা ধারণা করেতে পেরে বাসা পাল্টে ফেলে। পরে যে ভ্যানওয়ালা আমিনদের বাসার জিনিসপত্র বহন করে নতুন বাসায় নেয় তার মাধ্যমে নতুন বাসা থেকে আটক করা হয়।

সর্বশেষ গত ১ অক্টোবর দিনগত রাতে আমিনুল ইসলাম আমিনকে আটক করা হলে, সে ২ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পিবিআইয়ের তদন্তে এখন পর্যন্ত উঠে আসা তিনজনের মধ্যে দু’জন কারাগারে রয়েছে, আর পলাতক রয়েছে একজন।

তবে এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পিবিআই।

জানা গেছে, নতুন তদন্তে এরমধ্যে অভিযুক্তদের কেনা ৭টি সিগারেটের হিসেব মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। যা থেকে আরও কেউ জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে চলে আসতে পারে!

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD