বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৮ অপরাহ্ন
মো.আরিফুল ইসলাম, বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর বাউফলে শহীদ আবু সাইদ-মুগ্ধ স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের নামে ব্যবসায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা মিলেমিশে গণহারে চাঁদাবাজি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার কালাইয়া বন্দরের গরুর হাট মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ওই ফুটবল টুর্নামেন্ট।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ছাত্রদের নাম বিক্রি করে এমন চাঁদাবাজির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বন্দরের ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও সচেতন মহল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বুধবার (৯ অক্টোবর) টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
ফাইনাল খেলার আমন্ত্রণের নামে কয়েকদিন ধরে কালাইয়া বন্দরের ব্যবসায়ী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মিলেমিশে চাঁদাবাজি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খেলায় সহযোগিতার নামে ব্যবসায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, ব্যাংক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বল প্রয়োগ করে ২শ থেকে ৫হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেয়া হয়।
নির্ধারিত চাঁদা না দেয়ায় অনেককে হুমকি দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। কালাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ও ইউপি সদস্য মোহাম্মাদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে জহির মুন্সী ও টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির সদস্য রাসেল হাওলাদার দলবল নিয়ে বন্দরের ব্যবসায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে খেলার নামে চাঁদা তোলেন।
এ চাঁদাবাজির সাথে কালাইয়া ইউনিয়ন যুবলীগের ক্রিড়া সম্পাদক রিয়াজ কেরানী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জু হাওলাদারও জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালাইয়া বন্দর ও লঞ্চঘাট এলাকায় হাজারের অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মাছের আড়ৎ, একাধিক ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকার চাঁদা তোলা হয়। বন্দরের ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও চাঁদা দিতে হয়েছে।
ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা এ চাঁদাবাজি করেন। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বিএনপি নেতারা দলবল নিয়ে খেলার নামে চাঁদা তুলতে নেমেছেন। তারা যা চেয়েছেন তাই দিতে হয়েছে। না দিয়ে তো উপায় নাই।
একাধিক শিক্ষক বলেন, খেলার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও চাঁদা নেয়া এমন ঘটনা এই প্রথম। বিএনপি নেতারা জোর করে এ চাঁদা নিয়েছেন। জোর করে চাঁদা তোলার কথা অস্বীকার করে কালাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ আলী বলেন, খেলায় সহায়তার জন্য টাকা চেয়েছি। যে যা দিয়েছে, তাই নিয়েছি।
কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি। আর টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন পুরষ্কার নিয়ে প্রতারণার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম পুরষ্কার ৩২ ইঞ্চি টিভি কিনেছি। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আপেল মাহমুদ ফিরোজ পুরষ্কার দিয়েছেন। এসময় কমিটির লোকজন ৩২ইঞ্চি টিভি পরির্বতন করে ২৪ ইঞ্চি টিভি দিয়েছেন।
বিষয়টা আমি জানার পর চ্যাম্পিয়ন দলকে ৩২ ইঞ্চি টিভি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটি সূত্র জানায়, স্থানীয় ছাত্র-জনতার উদ্যোগে শহীদ আবু সাইদ মুগ্ধ স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। ২৮ আগস্ট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৮টি দল অংশ গ্রহণ করেন।
১০ অক্টোবর (বুধবার) টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনাল খেলায় কালাইয়া ফুটবল একাডেমী ও লিয়ন একাদশ (পার্শ্ববর্তী উপজেলা দশমিনা) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এতে লিয়ন একাদশ চ্যাম্পিয়ন হন। খেলা শেষে লিয়ন একাদশের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। পরে চ্যাম্পিয়ন দলকে ৩২ ইঞ্চি টেলিভিশন দেয়ার কথা থাকলেও ২৪ ইঞ্চির টেলিভিশন দিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন লিয়ন একাদশের টিম ম্যানেজার মো. লিয়ন।
এদিকে, টুর্নামেন্ট আয়োজনে উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো অনুমতি না নেয়া হলেও চাঁদাবাজির আমন্ত্রণপত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজীর নাম প্রধান অতিথি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
চাঁদাবাজির বিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন সাংবাদিককে বলেন, তিনি দাওয়াত পত্র পেয়েছিলেন। তবে তিনি যাননি। আর চাঁদাবাজির বিষয়ে তার জানা নেই।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এমন কোনো টুর্নামেন্টের অনুমতি দেননি এবং তাকে প্রধান অতিথি করার বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না।
মো.আরিফুল ইসলাম বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
তারিখ- ১০/১০/২০২৪