সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ অপরাহ্ন
ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়ার দীর্ঘ ১৩ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও আজো সন্ধান মেলেনি জেলার উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও হারতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খানের। এখন তার পরিবার ও স্বজনরা জানেন না তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যে কি জুটেছে।
সাবেক এই ইউপি চেয়ারম্যান জীবিত আছেন, নাকি অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা ডিবি পরিচয়ে অপহরণের পর হত্যা করে তার লাশ গুম করেছে তা আজও অজানাই রয়ে গেছে। অপরদিকে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খান অপহরনের ১৩ বছর অতিবাহিত হচ্ছে আজ
বৃহস্পতিবার। কিন্তু এখনও রহস্যজনক কারণে কোন তথ্য দিতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। উল্টো অপহরনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রভাবশালী আসামিদের হামলা আর হয়রানির শিকার হয়ে আসছে সাবেক ওই চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যরা। তাই তারা নিখোঁজ আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবির খানের সন্ধান পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২৩ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী অজ্ঞাত কিছু লোক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খানকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই তার কোন সন্ধান মেলেনি।
ওইসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগের পর তারা হুমায়ুন কবির খানকে তুলে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে নিখোঁজ ইউপি চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ মঞ্জু খান বাদী হয়ে ওইদিন ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের রামপুরা
থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন।
সূত্রে আরও জানা গেছে, সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খান অপহরনের মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ঢাকার বাউরা নুরের চাঁন এলাকায় তার (হুমায়ুন) মালিকানাধীন প্রায় একশ’ কোটি টাকা মূল্যের ৭৫ শতক জমি দখল করে নেয় মালিবাগ ৯৬/১ চৌধুরীপাড়া এলাকার
বাসিন্দা জনৈক সালমা বেগম। প্রথমে হুমায়ুনের পরিবারের দাবি ছিলো, গুমের পেছনে সালমা বেগম ও তার বান্ধবী কবরী দায়ী থাকতে পারে। যার কারণে মঞ্জু খান বাদি হয়ে ওই বছরেই সালমা বেগম, আব্দুস সামাদ, মিন্টু, জুলহাস, জুলমাত, সাব্বিরসহ ১০ জনকে
আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
অপরদিকে হুমায়ুন খান নিখোঁজ হবার পর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও হঠাৎ একদিন ফোনটি খোলা পায় মঞ্জু খান। বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পর ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে খুলনা থেকে বিপুল দাস নামের একজনকে হুমায়ুনের মোবাইল ফোনসহ
গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মঞ্জু খান।
এরপর ওইবছরের ১৩ ডিসেম্বর একই থানায় নিখোঁজ ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন খানের ছোট ভাই মঞ্জু খান বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় উজিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবালকে প্রধান আসামি করা হয়।
চাঞ্চল্যকর ওই মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে সম্প্রতি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। বর্তমানে মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।
অপহৃত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খানের সহদর ও মামলার বাদি মঞ্জু খান অভিযোগ করে বলেন, তার ভাইয়ের সাথে একই এলাকার হায়দার খানের সাথে দীর্ঘদিন থেকে
বিরোধ চলে আসছিলো। ঘটনার দুইদিন আগে ঢাকার মাতুয়াইল এলাকায় বসে তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়ে যায়। এ ঘটনার দুইদিন পরেই তার ভাই নিখোঁজ হন। তিনি আরও জানান, ধারনা করা হচ্ছে হায়দার খান নাটকীয়ভাবে তার ভাইয়ের (হুমায়ুন) সাথে সমঝোতা করে তার (হায়দার) ঘনিষ্ঠজন তৎকালীন সময়ের ওটরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবালের যোগসাজসে হুমায়ুন খানকে অপহরনের পর হত্যা করে লাশ গুম করেছে। এমন অভিযোগ তুলে মামলা দায়েরের ফলে হাফিজুর রহমান ইকবাল তার সহযোগিদের দিয়ে কয়েকবার হামলা চালিয়ে তাকে আহত করেছে। মঞ্জু খান অভিযোগ করেন, ইকবাল তার নিজের লাইসেন্সকৃত শর্টগান দিয়ে তার ওপরে গুলি পর্যন্ত চালিয়েছিলো। আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জু খান আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমার ভাই কী বেঁচে আছেন, নাকি তাকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে। ভাই কী আর কোনদিন ফিরবে না।