শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন
ক্রাইম সিন ডেস্ক: আদালত চত্বরে আসামির ছবি তুলতে গিয়ে অতর্কিত হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকেরা। এতে স্থানীয় পত্রিকাসহ টেলিভিশন চ্যানেলের বেশকয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এ সময় ভাঙচুর করা হয়েছে সাংবাদিকদের বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা থেকে থেমে থেমে চলা কয়েক দফা হামলায় একপর্যায়ে আসামি বরিশালের বাকেরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম হাওলাদারের বাহিনীর সাথে আইনজীবী সহকারীরাও অংশ নেন। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে হিমশিম খেতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল হকের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিবেশ শান্ত করে। তবে এই হামলার ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আদালত সূত্রে জানা যায়, নিজ এলাকায় ভূমি নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে বাকেরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম হাওলাদারসহ ৫ জনকে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। সাংবাদিকেরা এই খবর সংগ্রহ করাসহ তাদের ছবি এবং ভিডিও ধারণ করতে বেলা ১২ টার পর থেকে আদালত চত্বরে অবস্থান নেয়। কিন্তু আদালতে কর্মরত পুলিশ কোনোভাবেই আসামির ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে দেয়নি এবং সাংবাদিকদের সহায়তা করেনি।
সংবাদকর্মীরা জানান, আসামি শহীদ হাওলাদারকে যখন কারাগারের গারদখানা থেকে বের করা হচ্ছিল তখন সাংবাদিকেরা ছবি ও ভিডিও ধারণ প্রস্তুতি নিলে শহীদুল ইসলাম হাওলাদারের লোকজন বাঁধা দেয়। সেই বাঁধা উপেক্ষা করে সাংবাদিকেরা ছবি ধারণ করতে গেলে তাদের ওপর চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা করে এবং বাংলাভিশন টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসনসহ দুজনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এসময় জেলা পুলিশের দায়িত্বরত সদস্যদের অনেকটা নীরব ভুমিকায় থাকতে দেখা যায়। এনিয়ে আদালত চত্বরে আরও সাংবাদিকেরা উপস্থিত হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে হামলাকারীরা আদালত চত্বরের উত্তর এবং সাংবাদিকেরা দক্ষিণ পাশে অবস্থান নিলে মাঝখানে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা যায়। এসময় পরিস্থিতিও অনেকটা শান্ত হয়।কিন্তু এরই মধ্যে কিছু বুঝে উঠার আগেই আদালতের উত্তর পাশ থেকে আইনজীবী সহকারী অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন একত্রিত হয়ে পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে। এসময় সাংবাদিককেরা পালটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় এবং তাদের মারধর করাসহ টেলিভিশন চ্যানেলের কয়েকটি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।
এ সময় সাংবাদিকেরা আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের অন্তত ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতির খবর পেয়ে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসির নেতেৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য এসে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করলেও সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার খবর পেয়ে বরিশাল প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহামুদ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপস্থিতিতেও আরেক দফা সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা করে আইনজীবী সহকারী ও চেয়ারম্যানের লোকজন। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে যায়। তখন পুলিশ সদস্যরা পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে। এবং উভয়কে দুদিকে সরিয়ে দেয়।
এই বিষয়ে প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন জানান, হামলায় অন্তত ২০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন, যাদের ১৩ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এই ঘটনায় পরবর্তীতে করণীয় কী? তা নিয়ে প্রেসক্লাবে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আসামী পক্ষের হামলায় আহত সংবাদকর্মীরা হলেন, বাংলা ভিশন টেলিভিশন চ্যানেল’র বরিশাল অফিসের ক্যামেরাপাসন কামাল, যমুনা টিভির ক্যামেরাপাসন শুভ, মাইটিভির ক্যামেরাপাসন শফিক, আরটিভির ক্যামেরাপাসন লিটন মোল্লা, দেশ টিভির লিটন হোসেন, মোহনা টিভির ক্যামেরাপাসন অপূর্ব, দৈনিক কলমের কন্ঠ পত্রিকার ফটোগ্রাফার ইমরান , সত্য সংবাদ পত্রিকার অলিউল ইসলাম, আমাদের বরিশাল পত্রিকার ফটোগ্রাফার নাঈম, আজকের বরিশাল পত্রিকার সাইফুল ইসলাম, ভোরের আলো পত্রিকার এনামিল রাসেল, র্কীতনখোলা পত্রিকার ফটোগ্রাফার জুয়েল, বাংলার বন পত্রিকার রাতুল ও সুজন, কলমের কন্ঠর শামিম, তালাশ পত্রিকার হ্নদয়, বাংলাদেশ বানী জিহাগ, কাগজ পত্রিকার আকিব, সুন্দর বন পত্রিকার মিজান পলাশ সহ আরো ৫/৬ জন। বর্তমানের তারা শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎস্বাধীন অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস জানান, আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে কিছু মাদকসেবী আইনজীবী সহকারী। আমরা দেখেছি হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে মাদক ও নারী নির্যাতনের মামলাও রয়েছে। নেশায় বুদ হয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে আইনজীবী সহকারীরা।
বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য বলেছি। বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞি বিচারক কবীর উদ্দিন প্রামানিক নিজে ঘটনাস্থলে আসেন। আমরা সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী সহকারীদের নিয়ে বসে ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান করব।
কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল হক জানান, আদালত চত্বরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিবেশ-পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ওসি বলেন, যতদূর জানা গেছে কয়েক দফা মারমারি হয়েছে। এতে সাংবাদিক-আইনজীবী সহকারীসহ উভয়গ্রুপের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।