শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন
বরিশালে ছাত্রলীগ নেতাকে হাতুড়ি পেটার ঘটনায় ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় ২ অনুসারীকে গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতাসহ বাকিদেও গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রেখেছে পুলিশ।
সরজমিনে অনুসন্ধান এর সময় এলাকায় সুত্রে মানুষ অভিযোগ করে বলেন, একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ড করে শিরোনাম হচ্ছে বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান সুজন। আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, ফেরিঘাট, খেয়াঘাট, বাস স্ট্যান্ড, অবৈধ ড্রেজারসহ বিভিন্ন স্থানসহ সব কিছু থেকে চাঁদাবাজি তার পেশায় পরিণত হয়েছে।রেনু পোনা আটকে বিপুল পরিমান অর্থ আয় করেছে অবৈধভাবে। চাঁদাবাজী, বরিশালের সাবেক জেলা প্রশাসককে হুমকিসহ নানান অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ গাঢাকা দিয়ে পালিয়ে ফের প্রকাশ্যে এসে আবারো শুরু হয় সুজনের চাঁদাবাজী।
১৫ মে ছাত্রলীগ কর্মী রাহাত সুজনের নিকট পাওনা টাকা চাইতে গেলে সুজনবাহিনী রাহাতের ওপর হামলা করে। হাতুড়ি দিয়ে সুজন রাহাতকে পিটায় এতে রাহাতের মাথা ফেটে রক্ষক্ষরন শুরু হয়। স্থানীয় লোকজন রাহাতকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাহাতকে ঢাকার রেফার করে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
রাহাত এখন জিবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। নামধারী বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতা সুজন চাঁদাবাজি আর রেনুপোনা আটকে টাকা কামাই করে অল্পদিনে হয়ে যান কোটিপতি। জিরো থেকে হিরো হওয়া এই ছাত্রলীগ নেতার হাতে গোটা পুর্বাঞ্চলীয় লোকজন জিম্মী। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে দেয়া হয় হাতুড়ি পেটা। বরিশালের পূর্বাঞ্চল থেকে পাচার হয় চিংড়ি’র রেনু সেখানে বড় ভাগা নেন আশিকুর রহমান সুজন। যেখানে সরকারের নিষেধাজ্ঞা সেই কাজের প্রধান সহযোগী তিনি। আশে ইলিশের বাচ্চা(চাপিলা) সেখানে হানা দিয়ে বিটমানি চালু করেন সুজন। প্রতি ট্রাক থেকে তাকে দিতে হবে টাকা। তার সহযোগী নিয়োগ করেন সর্বত্র। সহযোগীদের মাধ্যমে এবং সুজন সরাসরি চাঁদাবাজী করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে । বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সামনে কাচকি মাছের ট্রাক থামায় সুজনের সহযোগী রথি ও সুজন। ট্রাক থামিয়ে চাঁদা আদায়কালে ট্রাক ড্রাইভারের সাথে বাকবিতান্ডা বেজে যায় তাদের সাথে। তখনই বন্দর থানা পুলিশ দুজনকে আটক করে ।
মামলা নেয় বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে পর্দার আড়ালে থেকে যায় সুজন। নেহালগঞ্জ ফেরিঘাট দখল আর সেই ঘাট থেকে কোটি টাকার রেনু পোনা আটকে লাখ লাখ টাকা আদায়ের মূল হোতা আশিকুর রহমান সুজন। সুজন খুব ধুর্ত টাইপের লোক। কোন অনুষ্ঠান আসলেই বরিশাল নগরীতে তার বড় বড় সাইজের বড় বড় পোষ্টারের ভিড়ে অন্যদের পোষ্টার হারিয়ে যায়। কিন্তু তার হাত থেকে রক্ষা পায় না বরিশালের পূর্বাঞ্চলের কোন কিছু। অবৈধ জাটকা ইলিশ পাচার থেকে শুরু করে দালালী, ইটের ভাটায় হানাসহ নানাবিধ স্থান থেকে মাসোয়ারা আসে সুজনের জন্য।
বন্দর থানা এলাকার রাজনৈতিক নেতারা মনে করেন, সুজনের মত নেতার কারনেই আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুজন। উপজেলার পূর্বাঞ্চলে বাহিনী গড়ে তুলে ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, ফেরিঘাট, খেয়াঘাট, বাস স্ট্যান্ড, অবৈধ ড্রেজার সব কিছু থেকে চাঁদাবাজি তার পেশায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ জানায়, লাহারহাট এলাকা থেকে ট্রাকে কাচকি মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় দিনারের পুল এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান সুজন তার অনুসারি কর্মী রাসেল আকনসহ ৭/৮ জন মিলে ট্রাক থামিয়ে সাহেবেরহাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী রিয়াজকে মারধর করে ২০ হাজার টাকা ও ২টি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।
এসময় রিয়াজকে তারা হুমকি দিয়ে বলে, এই এলাকা দিয়ে মাছের গাড়ি যেতে হলে প্রতি রাতে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এভাবে হাজারো ঘটনার জন্ম দিয়েছে সুজন। বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ড আর ডজনখানেক মামলা নিয়ে গাঢাকা দেয় সুজন। সম্প্রতি আবার প্রকাশ্যে এসে শুরু করে তার পুর্বের চাঁদাবাজীসহ অপরাধ মুলক কর্মকান্ড।রুহুল কুদ্দুস রাহাত নামে এক ব্যবসায়িকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করার অভিযোগে বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনায় মামলার ৫নম্বর আসামী এবং সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, রাতে সংঘাতের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এবং রাহাতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে এবং দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল থেকে আমি বিষটি সুষ্ঠ তদন্তের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এর পাশাপাশি উর্দ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে বাকি আসামীদের গ্রেফতারের জন্য আমরা অভিযান অব্যহত রেখেছি।’ আহত রাহাতের পরিবারের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। অপরাধী সে যেই হোক কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরো বলেন, আহত রাহাতের পিতা গোলাম কবির বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাত করে মামলা দায়ের করেছেন। ৫নম্বর আসামী খালিদ হোসেন রবিন এবং সন্দেহভাজন মেহেদী হাসান নামে এক ব্যক্তিকে এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার আসামীরা হলো, বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজন, মো: শুভ, স্বপন হাওলাদার, মো: জিসান ও রবিন ও অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জন।