রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
বাউফলে মায়ের সাথে খেলতে গিয়ে ছিটকে পড়ে শিশুর মৃত্যু কুয়াকাটায় চলছে ৩দিন ব্যাপী রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই জলকেলি উৎসব সিদ্দিক সভাপতি, মিজান সম্পাদক। মহিপুর থানা যুবদলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত গৃহবধূ হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে কুয়াকাটায় মানববন্ধন গৌরনদীতে চোর সন্ধেহে গনপিটুনিতে আহত যুবকের দুইদিন পর মৃত্যু কুয়াকাটায় আগুনে পোঁড়া বন পরিদর্শন কলাপাড়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নকলে সহায়তার দায়ে দুই শিক্ষককে অব্যাহতি সড়ক সংস্কারের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল বাড়িতে ছাগল ঢোকাকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর সংঘর্ষ, আহত-৪ বরিশালে ৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ বরিশালের জেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে উৎস করের নির্ধারিত ফি কম নিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রেশন করার প্রমান পেয়েছে দুদক কলাপাড়ায় কৃষকদের অবস্থান ধর্মঘট ও স্মারকলিপি প্রদান কলাপাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিএনপি কার্যালয়সহ ৫টি দোকান ভস্মীভূত কলাপাড়ায় ইউনিয়ন বিএনপির বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বাউফলে সড়ক সংস্কারের দাবিতে স্থানীয়দের মানববন্ধন
৩ কিশোরের গোয়েন্দাগিরিতে হত্যারহস্য উদঘাটন

৩ কিশোরের গোয়েন্দাগিরিতে হত্যারহস্য উদঘাটন

Sharing is caring!

বরগুনা সদর প্রতিনিধি : বরগুনার স্কুলশিক্ষক নাসির হত্যা রহস্য উদঘাটন হয়েছে রাজু মিয়া নামে ২০ বছর বয়সী এক যুবকের হারিয়ে যাওয়া মুঠোফোনের কল রেকর্ডের সূত্র ধরে। সেই ফোনটি কুড়িয়ে পেয়েছিলেন সদর বরগুনারই এক দোকানদার। তার নামও রাজু। গত বছরের ২৩ মে রাতে বরগুনার নিজ বাড়িতে মারা যান গোলবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসির (৪৬)। মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার স্ত্রী ফাতেমা মিতুর জানানো তথ্যে প্রাথমিক ভাবে পরিবার ও স্বজনরা ধরে নেয় স্ট্রোক।

ঘটনার নয় মাস পর উদঘাটন হয় এটি স্ট্রোক নয় হত্যা। মিতু ও রাজু পরিকল্পিত ভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ব্যাক্তি উদ্যোগে তিন তরুণ এই হত্যাকাণ্ড উন্মোচন করেন। যারা কোনো প্রশিক্ষিত গোয়েন্দা না হয়েও রহস্য উদঘাটনের ঝুঁকি নেন। কুড়িয়ে পাওয়া একটি মুঠোফোনকে কেন্দ্র করে কীভাবে এই রহস্য উদঘাটন হলো তা এক রোমাঞ্চকর গল্প। এই তিন যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নেপথ্যের গল্পটি। ঘটনার শুরু গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে রাজু নামে বরগুনা সদরের এক দোকানদারের দোকান থেকে। রাজু বলেন, দোকান বন্ধ করে হেটে হেটে বাড়ি ফিরছিলাম। রাস্তায় মোবাইল ফোনটি পড়ে থাকতে দেখে তুলে নেই। চার্জ ছিল না তাই বন্ধ ছিল ফোনটি। কার ফোন বলে ডাকাডাকি করি। কারও কোন সাড়া না পেয়ে ফোনটি বাসায় নিয়ে ড্রয়ারে রেখে দেই। প্রায় মাস দেড়েক বন্ধ অবস্থাতেই ফোনটি ড্রয়ারে পড়ে ছিল। ভুলেই গিয়েছিলাম ফোনটির কথা। তবে একদিন রাতে মশার কয়েল খুঁজতে গিয়ে ড্রয়ারে রাখা ফোনটি আবার চোখে পড়লে চার্জে দিয়ে রাখি। সকালে ফোন অন করে দোকানে আসতেই একটি কল আসে। কল রিসিভ করার পর এক তরুণ ওই ফোনের মালিকানা দাবি করে ফোনটি ফেরত চান। আমি তাকে দোকানে এসে পরিচয় দিয়ে ফোনটি ফেরত নিতে বলি। কিন্ত তিনি পরিচয় না দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা অফার করে বলেন, ফোনটা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দিতে। যেখান থেকে তিনি ফোনটি নিয়ে নেবেন। রাজু বলেন, এভাবে পরিচয় গোপন করা ও টাকার প্রস্তাবে সন্দেহ জাগে মনে। ফোনের মেমোরি ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করি। আর তা করতে গিয়ে সেখানে পাই কিছু রেকর্ড করা ফোনালাপ।

রেকর্ডগুলো শোনার পর আমি নিশ্চিত হই যে, নাসির নামে কোনো এক স্কুলশিক্ষককে হত্যা করেছে তারই স্ত্রী ও সেই স্ত্রীর পরিচিত রাজু নামের এক ব্যক্তি। হতবাক হয়ে যাই। কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। হত্যাকারীর নামও রাজু, আমার নামও রাজু। আবার ফোনটাও আমার কাছে। আমি ভয় পেয়ে যাই। দিশেহারা হয়ে পড়ি। এভাবে প্রায় এক সপ্তাহ কেটে যায়। রাজু আরও বলেন, ভয় পেয়ে বিষয়টি চেপে যেতে চাইলেও মনের মধ্যে কিলবিল করতে থাকে নানান কৌতহল। একদিন ইয়াকুব দোকানে এলে গল্পচ্ছলে ঘটনা খুলে বলি ইয়াকুবকে। সেইসঙ্গে শোনাই রেকর্ডগুলোও। দুজন মিলেও ঠিক করতে পারছিলাম না কী করা যায়। বিবেকের তাড়নায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। এমন একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড চাপা পড়ে থাকবে? অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে? ইয়াকুবের সাথে বিষয়টি বলার পরে আমাদের সঙ্গে যোগ দেয় নাজমুল।

আমি দোকানে থাকি তাই নাজমুল ও ইয়াকু্ব বিষয়টি নিয়ে ঘাটতে শুরু করে। ইয়াকুব বলেন, আমি একটি ঋণদান সংস্থায় চাকরি করি। দোকানদার রাজু আমাদের ঋণগ্রহিতা। বিষয়টি আমার সঙ্গে আলাপ করার পর রেকর্ডগুলো আমি শুনি। আমরা তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।তাই হত্যাকারিদের অনুসন্ধানে নামি আমরা। নাজমুল বলেন, আমরা ফোনের মালিক রাজুকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। অনেক কৌশলের আশ্রয় নিয়ে রাজুর কাছে পৌঁছাই আমরা। জানতে পারি, ২০ বছর বয়সী রাজু মিয়া ঢলুয়া ইউনিয়নের গুলবুনিয়া এলাকার বারেক মিয়ার ছেলে। রাজু মিয়ার কাছে গিয়ে রেকর্ডগুলো শোনাই।

রেকর্ডগুলো শোনানোর পর নাসিরের স্ত্রী মিতুর ষড়যন্ত্রে তিনি এ হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেন রাজু। কৌশলে আমরা রাজুর স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারন করে রাখি। রাজু যাতে পালিয়ে না যায় এ জন্য আমরা তাকে সমঝোতার আশ্বাস দিয়ে নজরে রাখি। এরপর খুঁজে বের করি নিহত নাসিরের বাড়ি। নাসিরের ভাই জলিলের সঙ্গে কথা বলি আমরা। রেকর্ডগুলো তাকে শোনাই। শোনার পরও আইনের আশ্রয় নিতে কিছুটা অনিহা দেখান জলিল। হতাশ হয়ে পড়ি আমরা। কিন্তু থেমে যাইনি। এরপর নিহত নাসিরের স্ত্রী মিতুর সন্ধানে বের হই আমরা। জানতে পারি, বরগুনা শহরের থানাপাড়া এলাকায় বাবার বাসায় থাকেন মিতু। স্বামীর মৃত্যুর পর বাসার আসবাবপত্র সরিয়ে বাবার বাড়িতে উঠে গেছেন তিনি। আমরা মিতুর বিয়ের প্রস্তাবের জন্য খোঁজ নিচ্ছি এমন কৌশল অবলম্বন করে তার ব্যাপারে খোঁজ নিতে থাকি। পরে মিতুর বাবা মোক্তার মাহতাব হােসেনের সঙ্গে দেখা করে রেকর্ডগুলো তাকেও শোনাই। এসব শোনার পর তিনি বলেন, আমার মেয়ে আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আপনারা পুলিশে ধরিয়ে দেন ওরে। নাজমুল আরও বলেন, কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না আর।

তাই ওইদিন সন্ধার পর একজন গণমাধ্যমকর্মীর শরণাপন্ন হয়ে তার মাধ্যমে আমরা রেকর্ডগুলো নিয়ে থানায় যাই। রাজুর স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও, কল রেকর্ড ও সমস্ত তথ্য থানা পুলিশের কর্মকর্তার হাতে তুলে দেই। ওই রাতেই মিতু ও রাজুকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে রাজু ও মিতু উভয়েই পুলিশের কাছে নাসিরকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক সাংবাদিকদের জানান, গত বছর ২৩ মে ঈদুল ফিতরের আগের দিন রাতে নাসিরের মৃত্যুর খবর পান স্বজনরা। পরবর্তীতে স্বাভাবিক মৃত্যু জেনে তাকে স্বাভাবিক নিয়মেই তার দাফন হয়। ঘটনার আট মাস ১৯ দিন পর স্বজনরা জানতে পারেন নাসিরের স্ত্রী মিতু ও রাজু নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কম্বল চেপে শ্বাসরােধ করে হত্যা করেন। এ ঘটনায় নাসিরের বড় ভাই মাে. জলিল হাওলাদার বরগুনা সদর থানায় অভিযােগ করলে তদন্তে নামে পুলিশ। পরে তদন্তকালে ঘটনার প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু ও রাজুকে গ্রেপ্তার করা হয়। মিতু ও রাজুর কথোপকথনের ১৩টি অডিও রেকর্ড হতে হত্যা সম্পর্কে জানা যায়, বেপরোয়া চলাফেরা ও টিকটক-লাইকির ভিডিও তৈরিতে বাধা দেয়ায় স্বামী নাসিরের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন মিতু। তাই স্বামীকে মারতে লোক ভাড়া করেছিলেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর জন্য দরগায় ছাগলও মানত করেছিলেন তিনি। রাজু, ইয়াকুব ও নাজমুলের দাবি, এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক অপরাধীদের। তবে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও কিছুটা শঙ্কিত জানিয়ে রাজু, ইয়াকুব ও নাজমুল বলেন, আসামিরা ছাড়া পেলে আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে। তাই আমরা সুরক্ষা চাই।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD