বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের নির্যাতনে রেজাউল করিম রেজা (৩০) নামে অাইন মহাবিদ্যালয়ের এক ছাত্রর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।
এ ঘটনায় সুষ্ঠ বিচার দাবী করেছেন মৃতের স্বজনরা। তবে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার কতৃপক্ষ বলছে নির্যাতনের বিষয় তাদের জানা নেই। কিন্তু কারাগারে আসা কাগজে তার অসুস্থতার কথা উল্লেখ ছিলো। তবে তার দুই পায়ের বাহুর ফাক থেকে রক্তক্ষরন হচ্ছিলো। এ কারনে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত রেজাউল করিম রেজা বরিশাল নগরীর ২৪নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী ইউনুছ মুন্সীর ছেলে। নিহতর ফুপা তারেক মিয়া জানান, রেজাউলকে হামিদ খান সড়ক থেকে ঘটনার দিন রাত ৮ টার দিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এস আই মহিউদ্দিন মাহি। এসময় সেখানে উপস্থিত স্থানীয়রা ও নিহতের স্বজনদের সামনেই রেজাউলকে ধরে দুইজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম জানতে চায়। এসময় রেজাউল কিছু জানেন না বলে জানালে এসআই মহিউদ্দিন নিজের গাড়ির কাছে যায় এবং সেখান থেকে ফিরে রেজাউলের পকেটে হাত দিয়ে একটি নেশাজাতীয় ইনজেকশন পায় বলে জানায় এবং তাকে নিয়ে যায়।
ইউনুস মুন্সী জানান, ঘটনাস্থলে আসলে আমি আমার ছেলেকে ধরার কারন জানতে চাই মহিউদ্দিনের কাছে। মহিউদ্দিন জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে রেজাউলকে নিয়ে যায়। তখন রেজাউল দিব্যি সুস্থ ছিলো। পরে জানতে পারি রেজাউলকে গাজা সহ আটক করা হয়েছে। এরপর শুক্রবার রাত ৯টার দিকে আমাকে পুলিশ ফোন করে জানায় রেজাউল বাথরুমে পরে গিয়ে ব্লেডিং হয়েছে এবং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে রেজাউলের সাথে আমাদের দেখা করতে দেয়া হয়নি। এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা সুজন জানান, রেজাউলের সারা শরীরে জখমের চিহ্ন রয়েছে। রক্ত জমাট হয়েছে। বিশেষ করে দুই পায়ে স্পষ্ট জমাট রক্তের চিহ্ন রয়েছে। এতে নি:সন্দেহে প্রমান করে যে অমানবিক নির্যাতনেই রেজাউলের মুত্যু হয়েছে। রেজাউলের ভাই আজিজুল করিম বলেন, কোনো অপরাধ ছাড়াই রেজাউলকে ধরে নেয়া হয়েছে। তাকে নিয়ে আরো দুই ব্যক্তিকে ফাসানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ায় তার উপর নির্যাতন করা হয়েছে। নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা নির্যাতনকারী পুলিশের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন। এই বিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসাআই মহিউদ্দিন মাহি জানান, ২৯ তারিখ রাত সাড়ে ১০টায় রেজাউলকে গ্রেফতার করা হয় ১৩৬ গ্রাম গাজা ও ৪ অ্যাম্পুল নেশাজাতীয় ইনজেকশনসহ । ওইদিন রাত পৌনে ১২টায় তাকে কোতয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। রাতেই মামলা দায়ের করা হয় এবং পরের দিন আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করে। ওই যুবককে নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা। এছাড়া রেজাউলের বিরুদ্ধে আগেও মাদক মামলা ছিলো।
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক জানান, ৩০ তারিখ এই অাসামীকে রিসিভ করি। সেখানে ফরওয়ার্ডিং কাগজে অসুস্থতার কথা উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া তার শরীরে ক্ষত ছিলো। পায়ের বাহু থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ইনচার্জ হরে কৃষ্ণ সিকদার জানান, রক্তক্ষরন জনিত কারনে ১ তারিখ ৯টা ৩৫ মিনিটে পুরুষ সার্জারী ১ ইউনিটে তাকে ভর্তি করে কারা কতৃপক্ষ।
হাসপাতালের লাশ ঘরে উপস্থিত থাকা বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার এসআই আব্দুল কুদ্দুস জানান, এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হবে এবং লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। এরপর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় গনমাধ্যমে কিছু বলতে রাজি হননি হাসপাতাল পরিচালক ডা: বাকির হোসেন। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, আমার নিয়ম অনুযায়ী সুস্থভাবে আদালতে প্রেরণ করেছি। সেখান থেকে তাকে হাজতে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু স্বজনরা অভিযোগ করেছে সেহেতু বিষয়টা খতিয়ে দেখা হবে।