মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ১১:৫২ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা কলাপাড়ায় নদী থেকে ভাসমান লাশ উদ্ধার কলাপাড়া বাজার আয়োজিত  ফুটবল টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন কলাপাড়ায় বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক সাড়ে ১২ মন মাছ জব্দ কলাপাড়ায় ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মেগা প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন কলাপাড়ায় খালের উপর অবৈধভাবে নির্মিত ৭টি স্থাপনা উচ্ছেদ কুয়াকাটায় নানা আয়োজনে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন বাকেরগঞ্জে স্বামী স্ত্রীর দ্বন্দ্বের ঘটনায় সাবেক এমপিকে জড়ানোয় বিএনপির উদ্বেগ অপারেশন ডেভিল হান্ট” কলাপাড়ায় সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার-৬ কুয়াকাটায় পর্যটক হেনেস্তাকারী যুবদল সভাপতি বহিষ্কার টুরিষ্ট ভিসায় জেল খেটে বিদেশ ফেরত মকছুদ।কলাপাড়ায় দুই  প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা কলাপাড়া বিএনপির সাবেক সভাপতি’র দলবদল কলাপাড়ায় খাল থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চরশিবা সাংগঠনিক ইউনিয়ন শাখার উদ্দ্যোগে  মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
বরিশালে পরীক্ষায় কর্মকর্তাদের ‘সম্মানী’ বাণিজ্য

বরিশালে পরীক্ষায় কর্মকর্তাদের ‘সম্মানী’ বাণিজ্য

Sharing is caring!

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় ‘সম্মানী’ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। সম্মানীর নামে তিনি বরিশাল জেলার ৬৩ কেন্দ্র থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

শুধু তাই নয় পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো থেকে সম্মানী দিতে হয়েছে জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে। সম্মানী দেয়ার বিধান না থাকলেও কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হচ্ছে। শুধু জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষা নয়, এসএসসি পরীক্ষার সময়ও কেন্দ্রগুলোকে সম্মানী দিতে হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানান, গত দুই বছর ধরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ‘সম্মানী’র নামে এভাবে টাকা তুলছেন। আগে এ ধরনের কোনো নিয়ম ছিল না। কিন্তু বর্তমান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার যোগদানের পর থেকে সম্মানী দিতে হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে সম্মানীর টাকা শিক্ষা অফিসে গিয়ে দিয়ে আসতে হয়।

জানা যায়, ২ নভেম্বর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হয়ে ১৭ নভেম্বর শেষ হয়। এ পরীক্ষায় বরিশাল জেলায় কেন্দ্র ছিল ৬৩টি। এর মধ্যে স্কুল কেন্দ্র ৪৫টি এবং মাদ্রাসা কেন্দ্র ১৮টি। প্রতিটি কেন্দ্রকে সম্মানী হিসেবে নির্ধারিত অংকের টাকা দিতে হয়েছে।

এসএম মমতাজ মজিদুন্নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা জেলা শিক্ষা অফিসারকে দুই হাজার টাকা সম্মানী দিয়েছি। এছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা) তিন হাজার টাকা, ম্যাজিস্ট্রেটকে তিন হাজার টাকা এবং ট্যাগ অফিসারকে ২৫শ’ টাকা দিয়েছি। পরীক্ষা কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ট্যাগ অফিসার হলেন সদস্য। তবে পরিপত্রে তাদের সম্মানী দিতে হবে এমন কোনো কথা উল্লেখ নেই। তারপরও পরোক্ষভাবে অনেক কিছু করতে হয়। আমার স্কুলে দু’দিন একজন ম্যাজিস্ট্রেট আসছিলেন। তাকে সম্মানীর টাকা পাঠাতে একটু দেরি হওয়ায় তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে নালিশও করেছিলেন।’

বরিশাল নগরীর শেরেবাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা খুব সামান্য টাকা পেয়ে থাকি। এ টাকা দিয়েই সব কিছু ম্যানেজ করতে হয়। এর মধ্যে জেলা প্রশাসককে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়াও ম্যাজিস্ট্রেট, ট্যাগ অফিসার ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে সম্মানী দিতে হয়। অবশ্য কেন্দ্র ফি হিসেবে পরীক্ষার্থীরা ১৫০ টাকা দিয়ে থাকে। মূলত সেই টাকার দাবিদার পরীক্ষার সময় যারা কক্ষে দায়িত্বে থাকেন তাদের। কিন্তু সব মিলিয়ে এসব কিছু করতে হয়।’

এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র নগরীর হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফখরুজ্জামান জানান, লিখিতভাবে নয়, প্রস্তুতি কমিটির সভায় এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেন্দ্র সচিবই সম্মানী পৌঁছে দেন সবার কাছে। বরিশাল নগরীর জগদীশ স্বারসত বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরীক্ষা কমিটির সদস্য জাকির হোসেন বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে সম্মানী দেয়া হচ্ছে। এর আগে এ ধরনের নিয়ম চালু ছিল না। আগে দেইনি কেননা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সম্মানী বাবদ কোনো বরাদ্দ ছিল না। এ বছর আমরা তাকে ১৫শ’ টাকা দিয়েছি।’

বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দুই হাজার টাকা করে এ বছরই প্রথম সম্মানী দিলাম। সব কেন্দ্র সচিবের সঙ্গে আলোচনা করেই টাকার অংক নির্ধারণ করা হয়েছে।’

একাধিক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা পরীক্ষার সময় দাঁড়িয়ে ৩ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করি। এজন্য আমাদের সর্বোচ্চ সম্মানী দেয়া হয় মাত্র ১২০ টাকা। আর জেলা শিক্ষা অফিসারসহ অনেক কর্মকর্তা যারা কোনো দায়িত্ব পালন করেন না, তারা কয়েক হাজার টাকা সম্মানী নেন। আগে কর্মকর্তাদের সম্মানী দিলেও তারা ফিরিয়ে দিতেন। কিন্তু গত দুই বছর ধরে অনেক কর্মকর্তা চেয়ে সম্মানী নিচ্ছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বরিশাল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস বলেন, ‘এ ধরনের সম্মানী দেয়ার জন্য কোনো ফান্ড নেই। তারপরও অনেক কেন্দ্র থেকে ইউএনও এমনকি ডিসিদেরও সম্মানী দেয়া হয় বলে শুনেছি। আবার অনেকে আছেন সম্মানী নেন না। এটা হচ্ছে যার যার মানসিকতার বিষয়।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর বরিশাল আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘কর্মকর্তাদের সম্মানী দেয়ার বিধান কোথাও নেই।’

জানতে চাইলে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা পরিচালনার জন্য একটি বাজেট আছে। সেখান থেকেই পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্মানী দিতে হয়। যদিও লিখিতভাবে এরকম কিছু নেই যে, সম্মানী দিতে হবে।’

 

সূত্র: যুগান্তর

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD