রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১০:১৫ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:বরিশালে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের মাত্র ৩ দিনের মাথায় তা স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল। গত ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রী কমিটির দায়ীত্ব প্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরীত এক চিঠিতে বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি স্থগিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি অমিনুল ইসলাম লিপন ও সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জনি কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশ অমান্য করাসহ অর্থের বিনিময় পদ বিক্রিরমত গুরুত্বর অভিযোগে জড়িয়ে পরেছেন।
এসকল কারনেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বরিশাল জেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের নব গঠিত কমিটি স্থগীত করেন কেন্দ্র। এমনকি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশেই বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলকে উত্তর ও দক্ষিন দুই ইউনিটে বিভক্ত করার সিদ্ধন্ত প্রায় চুরান্ত করেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।
অর্থের বিনিময় পদ বিক্রির অভিযোগ থেকে রক্ষাপেতে সভাপতি ও সম্পাদক নবগঠীত কমিটির নেতাদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন। কিন্তু সেখানেও নবাগত কমিটির নেতারা সাক্ষর দিতে অপরগতা করে পদ বানিজ্যের টাকার ভাগ চাইছেন। সবকিছু মিলিয়ে নিজেদের পদ ধরে রাখার জন্য সভাপতি ও সম্পাদক ঢাকায় অস্থান করে কেন্দ্রীয় নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে গুরছেন।
জানাযায়, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি’র অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোন ইউনিট কমিটি গঠনের পূর্বে অবশ্যই অধিনস্থ স্থানীয় জেলা, উপজেলা বা মহানগর বিএনপি’র নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে করতে হবে। এ মর্মে সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে প্রতিটি ইউনিট বিএনপির নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্র থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সেই মোতাবেক বরিশাল উত্তর ও দক্ষিন জেলা বিএনপি তাদের অধিনস্ত সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়। কেন্দ্রের নির্দেশনা জানিয়ে চিঠি দেয়ার পরেও বরিশাল উত্তর বা দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র কাছ থেকে কোন অনুমোদন, শুপারিশ বা তাদের সাথে আলোচনা না করেই বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাস্বেবকদলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম লিপন ও সম্পদক রফিকুল ইসলাম জনি কেন্দ্র থেকে ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করান।
এজন্য জেলা বিএনপি’র দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটির কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদল। নবগঠীত কমিটি স্থগীত হওয়ার পরেই মুখ খুলতে শুরু করেন নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া ত্যাগী নেতা কর্মিরা।
নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া এক নেতা বলেন সভাপতি ও সম্পাদক অর্থের বিনিময় পদ বিক্রি করেছেন। এমনকি প্রবাশিদের কেও এই কমিটিতে টাকার বিনিময় পদ পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন সভাপতি ও সম্পাদকসহ তাদের মনোনীত ব্যাক্তিদের বিকাশ একাউন্ট এর স্টেটমেন্ট কেন্দ্রী স্বেচ্ছাসেবকদল চেক করলেই অর্থের বিনিময় পদ বানিজ্যের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটিতে গ্রেপ্তাপ হওয়া ক্যাসিনো ব্যবসায়ী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা, প্রবাসীদের ঠাঁই দেয়ার মতো ভয়াবহ অভিযোগ পাওয়া গেছে। অর্থের বিনিময়ে অর্ধশত নেতার সঙ্গে পদ বাণিজ্য হয়েছে বলেও অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদল। তাছাড়া মূল দলের মতামত না নেয়াও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা লংঘন। এ ঘটনায় বরিশাল স্বেচ্ছাসেবক দলসহ গোটা বিএনপিতে তোলপাড় চলছে।
দলীয় সূত্রে জানাযায়, ক্যাসিনো ব্যবসায়ী খালেদ মাহমুদ ভুইয়া যখন ধরা পড়েন, তখনই আটক হন কামরুজ্জামান টুলু নামে একজন। যাকে বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪০নং সহ-সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে নতুন কমিটির ৫৭ নং সহ-সম্পাদক আকবর হোসেন মাসুদ ৫ বছর যাবত ইটালিতে অবস্থান করেও অর্থের বিনিময়ে পদটি পেয়েযান। কমিটির ৭৮নং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন নয়ন ৪ বছর যাবত জাপানে থাকলেও টাকার বিনিময়ে পেয়ে জান গুরুত্ব পূর্ন এই পদটি। ২৯নং সহ-সাধারণ সম্পাদক আল আমিন খান স্থানীয় সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হলেও বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের গুরুত্বপূর্ন পদ দখলে নেন। অভিযোগ রয়েছে পদ দেওয়া প্রায় অর্ধশত নেতার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে।
স্বেচ্ছাবেক দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম লিপন ও রফিকুল ইসলাম জনির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে এমন পদ বাণিজ্য হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাধারন সম্পাদক জনির পদ বানিজ্য কারনেই ঠাঁই পেয়েছে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রবাশীরাও ।
এ ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জনি বলেন, কেন্দ্র থেকে গত বৃহস্পতিবার প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে অনিবার্য কারণে কমিটি স্থগিত করা হলো। তিনি বলেন, সহ-সম্পাদক কামরুজ্জামান টুলু ক্যাসিনো খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন। কিন্তু সে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। সংগঠনের বাইরে গিয়ে কি করছে তা জানা নেই। যেসব অর্থনৈতিক অভিযোগ করা হয়েছে তা প্রমাণ করুক বলে তিনি চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি স্বীকার করেন যে, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আনুষ্ঠানিক মতামত নেওয়া হয়নি।
এদিকে বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের আবদুল্লাহ সাদী বলেন, ‘কমিটির কার্যক্রম অনিবার্জ কারণবশত স্থগিত হয়েছে বলে শুনেছি। জেলা বিএনপি নেতার করা অভিযোগের বিষয়টির ব্যখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের বিষয়ে যে চিঠির কথা বলা হচ্ছে সেটা সঠিক। তবে ওই চিঠি আমরা গত এক মাস আগে পেয়েছি। অথচ আমাদের যে পুর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হয়েছে সেটা আরো ছয় মাস আগে কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়। সেই কমিটিই অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ বলেন, তারা মূল দলের মতামত না নিয়ে কমিটি করেছে। যে কারণে ওই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চান বলেন, ক্যাসিনো ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও সেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের টাকার বিনিময় পদ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অভিযোগ রয়েছে পদ দেওয়া অর্ধশত নেতার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা রয়েছে অঙ্গ সংগঠনের কমিটি করতে হলে মূল দলের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ লংঘন করা হয়েছে। তারা এসব বিষয় দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে অবহিত করেছেন।