মোঃ নাসির উদ্দিন, পটুয়াখালী সংবাদদাতাঃ
পটুয়াখালীর গলাচিপায় শাহিন ফকিরের মাছের ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে ১০ লাখ টাকার মাছ মেরে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।
রবিবার (১২ মে) দিবাগত গভীর রাতে উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মো. নুরু ফকিরের ছেলে মো. শাহিন ফকিরের মাছের ঘেরে এ ঘটনা ঘটে।
দুর্বৃত্তের বিষ প্রয়োগের ফলে ঘেরের প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ মরে ভেসে উঠেছে। মরা মাছ ভাসতে দেখে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন আর ঋণের বোঝা মাথায় থাকায় অঝোরে কান্না করছেন শাহিন ফকির (৩৫)।
এ বিষয়ে শাহিন ফকিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি খলিলুর রহমান তালুকদারের কাছ থেকে প্রায় ৪ একর জায়গা লিজ নিয়েছে। প্রতি বছর জমির মালিককে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়।
খলিলুর রহমান তালুকদারের ঐ ৪ একর জায়গায় ভেকু দ্বারা মাটি কেটে মাছের ঘের তৈরি করে কয়েক বছর ধরে মাছ চাষ করছি। এ বছর আমি প্রায় ১০ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ চাষ করেছি।
এর মধ্যে আছে পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, চাইনিজ পুঁটি, চিংড়ি, নাইলোন টিকা, রুই, কাতলসহ দেশীয় বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করেছি।
কিছু দিনের মধ্যেই মাছগুলো বাজারে বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠতো।
গতকাল রাতে আমরা খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘুম থেকে উঠে ঘেরের পাড়ে যাই।
তখন টর্চ লাইটের আলোতে ঘেরের মাছগুলো ভেসে উঠতে দেখি।
আমার ঘেরে দুর্বৃত্তরা বিষ প্রয়োগ করায় সব মাছ মরে ভেসে উঠেছে।
আমার সাথে দুর্বৃত্তরা কেন এমন করল। আমি বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এ ঘের করেছি।
এখন আমি ঋণ কীভাবে দিব আর সংসার কীভাবে চালাব বুঝতে পারছিনা।’ এ কথ্ াবলে সে কান্নায় ভেংগে পড়ে।
এ বিষয়ে শাহিন ফকিরের স্ত্রী চম্পা বেগম বলেন, আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল ঐ ঘের। ঋণ নিয়ে এ ঘের করেছে।
আমরা গরিব মানুষ। এ বছর মাছ বিক্রি করে আমার স্বামী আমাদের ঘরটা ঠিক করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু মাছ মেরে ফেলায় ঘর উঠানো দূরের কথা এখন আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। তবে ঋণ পরিশোধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।
সরকারিভাবে কোন অনুদান পেলে আমরা আবার মাছ চাষ করতে পারব।
এ বিষয়ে জমির মালিক খলিলুর রহমান তালুকদার বলেন, শাহিন আমার জমিতে মাছের ঘের করেছে।
অনেক টাকা ঋণ করে সে এটা করেছে। কিন্তু কে বা কারা ওর ঘেরে বিষ প্রয়োগ করেছে তা বুঝতে পারছি না।
এখন ওর পরিবারটি সর্বশান্ত হয়ে গেছে। এ বিষয়ে গোলখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন হাওলাদার জানান, শাহিন গরিব মানুষ।
ওর সাথে এ রকম করা ঠিক হয় নি।
তাবে পরিষদ থেকে যতটা সম্ভব বরাদ্ধ এলে ওকে দেয়ার ব্যবস্থা করব।
এ বিষয়ে গলাচিপা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করা হলে মৎস্য কর্মকর্তা মো. জহিরুন্নবী বলেন, মাছ আমাদের দেশের সম্পদ।
এই সম্পদকে টিকিয়ে রাখতে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কোন বরাদ্ধ এলে শাহিন পাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, বরাদ্ধ এলে শাহিনকে দেয়ার ব্যবস্থা করব।
গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফেরদাউস আলম খান বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি, কিন্তু কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’।