বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ১০:৩৭ অপরাহ্ন
ক্রাইমসিন ডেক্স: প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের অভিযোগে তরুণীর করা মামলা ভিত্তিহী এবং ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কেফায়েত হোসেন রনি। আসন্ন সিটি নির্বাচনকে ঘিরে তাকে সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলাটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি পিবিআই’র তদন্তে ধর্ষণের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে অভিযোগকারী তরুণীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলার হুশিয়ারি দিয়েছেন রনি।
বুধবার দুপুর ১টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই হুশিয়ারি দেন। তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলার সরকারি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর।
এসময় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, অভিযুক্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনি, ৫ নং ওয়ার্ড মহিলা কাউন্সিলর জাহানারা বেগম, ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমতাজ বেগম, ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ খান জামাল ,মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘গত ১৬ মে সোমবার আমার বিরুদ্ধে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ছালেহা আক্তার নামের এক নারী। আমি শতভাগ আস্থার সাথে বলতে পারি, এই অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যা ও আমার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। অভিযোগে ওই নারী উল্লেখ করেছেন, বিগত ৪-৫ মাস আগে আমার সাথে তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয় এবং পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর গত ৭ ও ৮ মে তাকে আমার নিজ বাসভবনে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছি। এরপর ১২ মে পুনরায় তাকে বাসায় ডেকে নিয়ে মারধর করেছি বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছে ওই নারী।
তিনি বলেন, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি, বিজ্ঞ আদালতে দেয়া ওই নারীর অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যা ও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। আমি আমার মা, ভাই ও ভাবিসহ যৌথ পরিবার নিয়ে পলাশপুর বৌবাজার সংলগ্ন দ্বিতল একটি ভবনে বসবাস করি। ওই ভবনের প্রবেশ মুখে সিঁড়ি থেকে শুরু করে চারপাশে একাধিক সিসি টিভি ক্যামেরা রয়েছে। আপনারা ফুটেজ পর্যালোচনা করলেই আসল ঘটনা জানতে পারবেন। প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গেল রমজানের মাঝামাঝি সময়ে আমার ব্যক্তিগ মোবাইল নম্বরে অপর একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। অপরপ্রান্ত থেকে এক নারী আমার পরিচয় জানতে চায়।
আমি তাকে আমার পরিচয় দিলে তিনি বলেন, তার এক বান্ধবী আমাকে পছন্দ করে এবং আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি মোবাইলের অপরপ্রান্তে থাকা ওই নারীকে জানাই ‘আমার বিয়ের বিষয়ে আমার মা ও বড় ভাই সিদ্ধান্ত নিবেন’। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার আনুমানিক ২-৩ দিন পরে অপর একটি নম্বর থেকে ফোন করে এক নারী আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় হয়রানি। তার মা আমাকে ফোন করে মেয়েকে বিয়ে না করলে আত্মহত্যার হুমকি দেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও দুটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সমাজে আমার সম্মানহানি করার হুমকি-ধামকি ধারাবাহিকভাবে আসতে থাকে। পুরো বিষয়টি আমার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে আমি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করি। পাশাপাশি হুমকি-ধামকি ও হয়রানির বিষয়টি র্যাব-৮ অধিনায়ককে জানাই।
তার পরামর্শে গত ১২ মে কাউনিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এবং নিজেকে আইনের হাত থেকে রক্ষা করতে ওই নারী আমার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, অভিযোগপত্রে ওই নারী তাদের ঠিকানা নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের হযরত কালুশাহ সড়ক এলাকায় উল্লেখ করেছেন। আদালতে অভিযোগ দেয়ার পর ওই দিন রাত সাড়ে ১১টায় অভিযোগকারীর মা আকলিমা খানম আমার বাসার সামনে যায় এবং সন্দেহভাজন ঘোরাফেরা করে। ওই সময় অভিযোগকারী আমার বাসার অদূরে ব্রীজের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমার বিরুদ্ধে নতুন কোন ষড়যন্ত্রের আবাস পেতে আমি তাৎক্ষণিক বিষয়টি কাউনিয়া থানা পুলিশকে অবহিত করি।
পুলিশ এসে আমার বাসার সামনে থেকে তাদের সরিয়ে দেয়। এসময় তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আদালতে অভিযোগ দেয়ার পর যেখানে বিষয়টি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সেখানে আমার বাসার সামনে তারা কেন গিয়েছিলেন? পর দিন ১৭ মে আবার তারাই কোতয়ালী মডেল থানায় গিয়ে আমার বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ করতে যান। তিনি বলেন, ‘আমি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। বিজ্ঞ আদালত যা সিদ্ধান্ত দিবেন তা-ই মাথা পেতে নেবো। কিন্তু অভিযোগকারী নিজেই আদালত ও আইনের প্রতি আস্থা না রেখে আমার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি গণমাধ্যমেও মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিচ্ছে। সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আর এক বছর পরে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। তাই অনুসন্ধান করে সঠিক ও সত্য ঘটনাটি তুলে ধরার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখো উন্মোচন করার দাবি জানান সাংবাদিকদের প্রতি। এদিকে, লিখিত বক্তব্য পরবর্তী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলার সরকারি প্রকৌশলী অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘রনি মহানগর আওয়ামী লীগের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং একই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তাই মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষে আমি এই সংবাদ সম্মেলনে এসেছি। তিনি বলেন, ‘আমরা মহানগর আওয়ামী লীগ অপরাধ করিনা, অপরাধের প্রশ্রয় দেই না এবং এর সমর্থনও করিনা। কাউন্সিলর রনির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি র্যাব এবং পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এটা আমরা জানতে পেরেই আজ সংবাদ সম্মেলন করছি। তবে পিবিআই অভিযো।