শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
যারা ভূমিদস্যুতার মাধ্যমে চর দখলে জড়িত , নির্বাচিত সরকার এসে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেবে ।। অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ কলাপাড়ায় ইভটিজারের মাথা ন্যাড়া করে দিলেন বিক্ষুব্ধ জনতা কলাপাড়ায় হিন্দু পাড়াগুলোতে উদযাপিত হচ্ছে হলি উৎসব সারাদেশে নারী ধর্ষন, সংহিসতা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে কলাপাড়ায় মানববন্ধন পটুয়াখালীতে অবস্থিত ক্যান্টনমেন্ট ‘পটুয়াখালী সেনানিবাস’ করার দাবীতে মানববন্ধন বাউফলে অবৈধ ব্রিকফিল্ড বন্ধের ২৪ ঘন্টা না যেতেই ফের চালু বাউফলে জেলে ও চাষী পরিবারের মানববন্ধন বন্ধুপ্রতিম ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা ও ইফতার মাহফিল করেছে ছাত্রশিবির বরিশাল মহানগর শাখা বেগম জিয়ার রোগমুক্তির জন্য মেহেন্দীগঞ্জে বিএনপির ইফতার মাহফিল আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে কলাপাড়ায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় রাষ্টীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়ার দাফন সম্পন্ন কলাপাড়ায় স্ট্যান্ড ফর এনআইডি কর্মসূচিতে নাগরিক সেবা বন্ধ বাউফলে বিএনপি নেতার বাসভবন থেকে টিসিবির পণ্য উদ্ধার কলাপাড়ায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে মারধর, হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন নুরুন্নাহার কেয়া কলাপাড়ায় মরা খালে দখলদারের ছোবল
বরিশাল ট্রিপল মার্ডার: গোপন সম্পর্ক দেখে ফেলায় ৩ খুন

বরিশাল ট্রিপল মার্ডার: গোপন সম্পর্ক দেখে ফেলায় ৩ খুন

Sharing is caring!

বরিশালের বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুরে একই পরিবারের তিন সদস্যকে খুনের ঘটনার পেছনের রহস্য ও আলামত এরইমধ্যে উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি হত্যার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে এরইমধ্যে গ্রেফতার প্রধান আসামি জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনার মূল পরিকল্পনকারী হিসেবে থাকা জাকির হোসেনের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাড়ির মালিক কুয়েত প্রবাসী আব্দুর রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুকে গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ।

যদিও মিশুর কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করতে পারেনি পুলিশ, তাই অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে এখন পর্যন্ত পুলিশের তদন্তে যা বেরিয়ে আসছে তাতে প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুর সঙ্গে রাজমিস্ত্রী তথা ঝাঁড়ফুকে পারদর্শী কথিত ফকির কারাগারে থাকা জাকিরের সঙ্গে প্রণয়ের গোপন সম্পর্ক ছিল। যা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক পর্যন্ত গিয়ে গড়ায় বলে ধারণা পুলিশের।

এসব বিষয়ে বিস্তারিত না জানলেও তদন্ত কর্মকর্তাসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের ঘটনার বিবরণে কারাগারে থাকা জাকির ও তার সহযোগীদের বরাত দিয়ে যেটুকু জানিয়েছেন। সে অনুযায়ী বাড়ির মালিক আব্দুর রব ১১ বছর ধরে কুয়েতপ্রবাসী। সর্বশেষ একবছর তিনি বাড়িতে আসেন। এখানে তার ঘরে মা নিহত মরিয়ম বেগম, স্ত্রী গ্রেফতার হওয়া মিশরাত জাহান মিশু এবং এক ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তান থাকেন।

বছর দেড়েক আগে আব্দুর রব গ্রামের বাড়িতে একতলা একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ভবন নির্মাণের সময় জাকির নিজেও রাজমিস্ত্রীর কাজ করেছেন। কাজের সুবাদেই জাকিরের সঙ্গে প্রবাসীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সক্ষতা গড়ে ওঠে। পাশাপাশি জাকির জিন-পরীর কথা বলে ঝাঁড়ফুক দিয়ে রোগের সমাধান করার কথা বলে প্রবাসীর পরিবারের নারীদের মন জয় করেন।

জানা গেছে, কয়েকমাস আগে প্রবাসীর স্ত্রী মিশুর লিভারের সমস্যা ধরা পড়ে। জাকিরই তাকে সালসা (রক্তশোধক) এনে দেওয়াসহ তদবীর দেওয়ার নাম করে ছয় হাজার টাকার চুক্তি করেন। এ সময় মিশুর দেবরের মেয়ে কলেজছাত্রী আছিয়ার বাচ্চা হবে না জানিয়ে তাকে তদবীর দেওয়ার কথা বলে আড়াই হাজার টাকা চায়। আছিয়া গরিব বিধায় সে দিতে পারবে না বলে জানলে, জাকির জিন-পরীর দোহাই দিয়ে ফ্রি করে দেওয়ার কথা বলেন। এভাবে নানান অযুহাতে মিথ্যে আশ্বাসে মিশুর সঙ্গে সক্ষতা গড়ে তোলেন জাকির।

মাসখানেক আগে মিশুর দেবর ও প্রবাসী আব্দুর রবের খালাতো ভাই ইউসুফের একটি মোবাইল সেট হারালে জিনের সঙ্গে কথা বলে তা এনে দেওয়ার আশ্বাস দেন জাকির। এজন্য তদবীর দিতে তাবিজ-দেয়াসহ রাতে প্রবাসীর বাড়ির ছাদের দরজা খুলে রাখাসহ নানান কথা বলেন জাকির।

এদিকে কিছুদিন আগে মিশুকে ভণ্ড ফকির জাকিরকে জড়িয়ে ধরতে দেখেন ইউসুফ। যা দেখার পর বিষয়টি ইউসুফ বাড়ির কিছু লোকের সঙ্গে আলাপ করেন। যেটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে মিশু এবং ভণ্ড ফকির জাকিরকে বলেন ইউসুফকে সরিয়ে ফেলার জন্য। পাশাপাশি শাশুড়ি মরিয়মকেও শায়েস্তা করার কথাও বলেন।

সেই সূত্র ধরে ঘটনার রাতে ইউসুফকে প্রবাসীর বাড়িতে থাকতে বলা হয়। যা নিশ্চিত হয়েই বাড়ির প্রধান দরজা কৌশলে খোলা রেখেই ঘুমাতে যান মিশু। এরপর গভীর রাতে কাগাশুরা এলাকা থেকে অটোরিকশাচালক জুয়েলকে নিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে সলিয়াবাকপুর আসেন জাকির হোসেন। জুয়েলকে বাড়ির একটি টিউবয়েলের কাছে বসিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেন জাকির। পরে মাফলার ও বালিশ ব্যবহার করে একে একে ইউসুফ, মরিয়ম বেগম ও শফিকুল আলম মাস্টারকে হত্যা করা হয়। শফিকুলকে খুনের কোনো পরিকল্পনা না থাকেলও সে জেগে যাওয়ায় তাকে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের কাছে জানিয়েছে জাকির।

সবার মৃত্যু নিশ্চিতের পর জুয়েলের সহযোগিতায় ইউসুফের মরদেহ পুকুরপাড়ে এবং মরিয়মের মরদেহ বারান্দায় রাখা হয়। পরে মিশুকে তার কক্ষ থেকে ডেকে আনা হয় এবং নিহত মরিয়মের পাশে শুয়ে থাকা নাতনি আছিয়াকে মিশুর রুমে প্রবাসীর সন্তানদের কাছে পাঠানো হয়। আর তখন আছিয়া জাকির ও অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি হিসেবে জুয়েলকে দেখতে পান।

এরপর জাকির এ কাজের জন্য মিশুর কাছে টাকা চাইলে সে জুয়েলের জন্য নিজ মোবাইলের বিকাশ থেকে ওই রাতের ৪টা ২১ মিনিটে পাঁচ হাজার টাকা সেন্ড করেন। আর জাকিরের টাকা পরে দেবেন বলে জানায়, এ সময় শাশুড়ি মরিয়মের মোবাইল ফোন দিয়ে সঙ্গে মিশুর সঙ্গে আপত্তিকর কিছু ছবি তুলে রাখেন জাকির। যা তুলে দেন জুয়েল। কিন্তু আছিয়াকে নিয়ে সন্দেহ পোষন হলে জাকির তাকে ধর্মীয় দুর্বলতার ভয় দেখিয়ে সার্বিক বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য ওয়াদাবদ্ধ করে বাড়ি থেকে সটকে পড়েন।

বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, ট্রিপল মার্ডারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআই ও সিআইডির টিম যায়। সবাই যৌথভাবে তদন্তে নামি এবং রাতের খাবারসহ নানান আলামত সংগ্রহ করি।

মূলত আমাদের তদন্তেই জাকিরের নামটি বেড়িয়ে আসে। আর ঘটনাস্থল থেকে কেউ একজন জাকিরকে সবকিছু জানায়। তখন জাকির ভাবে ঘটনাস্থলে গেলে তাকে আর কেউ সন্দেহ করবে না। পরে আছিয়া ও মিশুর কাছ থেকে রাতে জাকিরসহ জুয়েল নামে আরো এক পরিচয়বিহীন ব্যক্তির প্রবাসীর বাড়িতে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হই। পরে জাকিরকে আটকের পর অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি হিসেবে থাকা জুয়েলের সন্ধান পাই। যদিও জাকির আটকের পর প্রথমদিকে আমাদের তেমনভাবে সহায়তা করছিল না। সে নানানভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছিল। পরে বরিশাল নগরের সাগরদী এলাকা থেকে যখন প্রবাসীর বাড়ি থেকে খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধার করি তখন সবকিছু খোলাসা হয়ে যায়। আর জুয়েলকে বরিশাল থেকে ঘটনার আগ মুহূর্তে কাজের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয় বলেই এখন পর্যন্ত জানা গেছে।  আর জাকিরই গৃহবধু মিশুর সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা বলেছেন। মধ্যরাতে বিকাশে টাকা দেওয়াসহ নানান আলামত মিশুর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টির ইঙ্গিত দেয়। তাই নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে পুরো বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন, তাই নিশ্চিত করে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।  ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদের যেমন আইনের আওতায় আনা হবে, তেমনি আমরা চাচ্ছি একটি স্বচ্ছ তদন্ত যেখানে পুরো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এবং এর সঙ্গে জড়িতদের ভূমিকা বেরিয়ে আসবে।

 

আরো পড়ুন:**ব‌রিশা‌লে ট্রিপল মার্ডার : নিহত ম‌রিয়‌মের পুত্রবধূ গ্রেফতার।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD