শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
নিজের চেয়ে বয়স্ক এবং তালাকপ্রাপ্ত নারীদের বিয়ে করে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয়া মোঃ আরিফ ওরফে খান আরিফের নেশা পেশা।
মহান সাংবাদিক পেশার নাম ভাঙিয়ে মোঃ আরিফ করে যাচ্ছে ভয়ংকর অপরাধমূলক কার্যক্রম। এমন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাংবাদিক পরিচয়দানকারী মোঃ আরিফের ৪র্থ স্ত্রী মোসা. সুমনা আক্তার (৩৫)।
শনিবার ( ৮ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে (বিআরইউ) এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত বক্তব্যে সুমনা আক্তার বলেন, ঝালকাঠি পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত নেছারাবাদ গ্রামের আ. জলিল তালুকদারের মেয়ে আমি।
বর্তমানে আমি একজন এতিম ও ‘মজলুম নারী’। রক্তের আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায় ১৯ মাসের শিশু সোয়ায়েব খান আরাফ কে কোলে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।
২০২৩ সালের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমার সাথে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী খান আরিফ নামের এক যুবকের সাথে পরিচয় হয়।
প্রেমের সম্পর্কের পর গত ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখে বরিশাল মুসলিম গোরেস্থান রোডের মোঃ শাহজাহান-এর ছেলে মোঃ আরিফের সাথে নগরীর পূর্ব বগুড়া রোড কাজী অফিসে ১ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী বিবাহ হয়।
বিয়ের পর নগরীর নবগ্রাম রোড সিকদারপাড়া এলাকায় সংসার শুরু করলেও ভাড়ার বাসায় হঠাৎ মাঝে মাঝে আসা যাওয়া করত খান আরিফ। আর ১ম ও ৩য় স্ত্রীকে নিয়ে কাশিপুর বাজার সংলগ্ন হাতেম মীরার দিঘির পশ্চিমপাড় আলতাফ মিয়ার বাসায় ভাড়া থাকে।
বিয়ের পর থেকেই আরিফ বলতে থাকে- এই ভাড়ার বাসায় তোমার স্বর্ণালংকার রাখা নিরাপদ নয়।
স্বর্ণালংকার আমাকে দাও, আমার বাসায় রেখে দেব। আমি আরিফের কথায় রাজি না হয়ে বলি- আমার স্বর্ণালংকার আমার কাছেই থাকুক। আর এই স্বর্ণালংকার তুমি দেওনি।
হঠাৎ একদিন রাতে আরিফ বাসায় দুধ ও হরলিক্স নিয়ে আসে। রাতে ঘুমানোর পূর্বে আমাকে ওই দুধ ও হরলিক্সের সাথে গুলিয়ে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে পান করায়। আমি সরল মনে খেয়ে তা পান করে ঘুমিয়ে যাই।
সকাল ১১টার সময় উঠে দেখি আমার স্বামী নেই আর আমার স্বর্ণালংকার ১ ভরি ওজনের ১টি গলার চেইন, ৪ আনার ১ জোড়া এবং ৮ আনার ১ জোড়া কানের দুল, “আট আনা” ওজনের হাতের ব্যাঙ্গেল, ১ আনা ওজনের নাকর ফুল, ১৭শ টাকা মূল্যের হাতের ঘড়ি, ১০ হাজার টাকা মূল্যের ১টি মুঠোফোন, আমার জাতীয় পরিচয়পত্র, আমার এসএসসি ও এইচ এসসির মূল সনদপত্র, আমার বাবার লেখে যাওয়া পুরাতন একটি ডাইরি ও ভাড়ার বাসার চাবি নিয়ে যায়।
পূর্বে আমার এলাকার পার্শ্ববর্তী গ্রামে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর সেই স্বামী দুবাই চলে যায়। তারপর আমাকে বিদেশ নিতে চাইলে আমার পরিবার যেতে দেয়নি।
কয়েক বছরের মধ্যে স্বামী না আসায় আমি স্বামীকে ডিভোর্স দিই। পরে স্বামীর দেনমোহর বাবদ ১ লাখ ১৭ হাজার দিয়ে দেয়।
পরে আরিফের সাথে পরিচয় ঘটে। আরিফ আমাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে বিয়ের আগেই ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিল।
এমন প্রতারণা হবার পর আরিফের পরিবার সম্পর্কে আমি খোঁজ নিতে শুরু করি। সবকিছু জেনে আমি অবাক হয়ে যাই। আমি সহ আরিফের ৪টি স্ত্রী।
প্রথম সংসারে ২টি কন্যা সন্তান, ২য় ও ৩য় সংসারে কোনো সন্তান নেই। ৪র্থ অর্থাৎ আমার সংসারে রয়েছে ১টি ছেলে। পরে আমি বুঝতে পারি আরিফ- সব তালাকপ্রাপ্ত নারীদের বিয়ে করে তাদের নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার সহ জমি বিক্রির অর্থ হাতিয়ে নেয়।
যেমন আমার স্বর্ণালংকার নেয়ার পর আমার পিতার জমি বিক্রি করে ব্যবসার জন্য ২০/২৫ লাখ টাকা চায়।
পৈতৃক সূত্রে পাওয়া সেই জমি বিক্রি করে অর্থ না দেওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে।
পরে আমি আমার ওই চাকুরির জন্য দেওয়া ৫০ হাজার টাকা সহ স্বর্ণালংকারগুলো বারবার চাইলে আমাকে আরিফ গত ৩১-০৮-২০২৪ তারিখে তালাক দেয়।
তালাক দেওয়ার পূর্বে সে আমাকে একাধিকবার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছিল।
তালাকের পূর্বে আমি গত ০৪-০৪-২০২৪ তারিখে বরিশাল জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে বিষয়টি সমাধানের জন্য একটি লিখিত আবেদন করার পরই আরিফ আমাকে তালাক দেয়।
লিগ্যাল এইড অফিসে তারিখের পর তারিখ পরলেও আরিফ আসে না। পরে আমি লিগ্যাল এইড অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ঘটনা তুলে ধরে একটি যৌতুক মামলা দায়ের করি। আরিফ আপোশ মীমাংসার কথা বলে আদালত থেকে জামিন নেয়।
আপোশ মীমাংসার কথা বলে আরিফ ও তার প্রথম স্ত্রী সহ ৫ জন মিলে আমার বাসায় যায়। একপর্যায় তারা আমাকে বেদম মারধর করে।
স্থানীয়রা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। সুস্থ হয়ে আমি পুরো ঘটনা তুলে ধরে গত ১৩-০৩-২০২৫ তারিখে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করি।
এই মামলা দায়ের করার কারণে আরিফ গত ১৫-০৯-২৫ তারিখ আমাকে ও আমার কোলে থাকা শিশুকে আদালত চত্বরে বসে বেদম মারধর করে আরিফ ও তার ১ম স্ত্রী তানিয়া আক্তার।
আমি হাজিরা দিতে আদালতে গিয়েছিলাম। উপস্থিত লোকজন আমাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ওসিসিতে ভর্তি করে।
পরে আমি সুস্থ হয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডাইরি (জিডি) দায়ের করি। বর্তমানে মামলা ২টি চলমান রয়েছে।
আর আরিফ আমাকে তো দূরের কথা তার ১৯ মাস ছেলে শিশুর কোনো ভরণপোষণ দেয় না।
মুঠোফোনে আরিফ বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকায় আমি আদালতে মোকাবিলা করবো।